Bangladesh quota reform movement
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ব্যাপকভাবে সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠে। আন্দোলনটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল, যা পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বৃহৎ আন্দোলনে পরিণত হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আন্দোলনটি মূলত সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শুরু হয়েছিল। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় একজন অজ্ঞাতনামা যুবক এবং ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের সামনে আরও দুজনের মরদেহ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামে সংঘর্ষে একজন শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এই আন্দোলনের ফলে সরকার ১৫০ জন নিহতের কথা স্বীকার করেছে, যদিও কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছে যে নিহতের সংখ্যা ১৮০ এরও বেশি। এছাড়াও, সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কারফিউ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করেছে।
এই আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ফলে অনেক আহত এবং গ্রেফতার হয়েছে।
আন্দোলনের পর, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ২১ জূলাই একটি রায় প্রদান করে যাতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা হয় অতঃপর উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন ৯৩% নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হবে এবং ৭% কোটা থাকবে বিভিন্ন সংরক্ষিত শ্রেণীর জন্য, যার মধ্যে ৫% মুক্তিযোদ্ধার বংশধরদের জন্য এবং ২% সংখ্যালঘু বা প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে আন্দোলনকারীরা মনে করছেন যে আদালতের এই সিদ্ধান্ত তাদের দাবির পুরোপুরি সমাধান করে না এবং সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে তার ওপর তারা নজর রাখবে।
সরকার সেনাবাহিনী নামিয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। যদিও তারা ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এই আন্দোলনের ফলে ছাত্রসমাজে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে, যাঁরা মেধা ভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার দাবি তুলেছিলেন। এ আন্দোলন দ্রুত অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ে এবং জাতীয় আন্দোলনের রূপ নেয়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় নেমে আসে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে তাদের দাবি জানাতে থাকে।
তারপর সরকার কর্তৃক নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাতিসংঘের শান্তি বাহিনীর UN লোগো বিশিষ্ট সাজোয়া যান ব্যবহার করেছে; যদিও এ সমস্ত যান ব্যবহারের মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করেন বিশেষ ব্যক্তিবর্গগণ।
অন্যদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই আন্দোলনে পুলিশের সহিংস আচরণের কঠোর সমালোচনা করেছে এবং আন্দোলনকারীদের প্রতি পুলিশের অবৈধ শক্তি ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে।
যদি কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সময় পুলিশ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই ধরনের ঘটনা একটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয় এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা নির্দেশ করে। এমন ঘটনায় উপযুক্ত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অমানবিক ঘটনা আর না ঘটে।
আন্দোলনের সময় জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সরকারের ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মৌলিক দায়িত্ব।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলমান রয়েছে। এই আন্দোলন মূলত সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার সংস্কার দাবিতে শুরু হয়েছে। গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট কোটাব্যবস্থার সংস্কারের আদেশ দিলে এই আন্দোলন তীব্রতর হয়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং দেশব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়।
সরকার সম্প্রতি একটি গেজেট প্রকাশ করে কোটাব্যবস্থা সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছে, তবে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত রয়েছে এবং আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
এই আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের যুব সমাজের রাজনৈতিক সচেতনতা ও শক্তির পরিচায়ক হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে। ২০২৪ সালের ঘটনা হিসেবে যদি কোনো নতুন ধারার উন্নয়ন বা পরিবর্তন ঘটে, তা ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
Comments
Post a Comment